মহম্মদপুরে কোনো বাঁধাই মানছে না অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা

মহম্মদপুরে কোনো বাঁধাই মানছে না অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা

মাগুরার মহম্মদপুরে এক মৌসুমে দেড় লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ বালু উত্তোলন করছে বালু খাদকেরা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে বালু খাদকদের এ অর্থদণ্ড দেন।

উপজেলার শিরগ্রাম খেয়াঘাট, পাল্লা খেয়াঘাট, কাশিপুর, বাবুখালি, হরিনাডাঙ্গা, রায়পুর, দাতিয়াদহ, চরঝামা, হরেকৃষ্ণপুর, চরঝামা, চরপাচুড়িয়া, কালিশংকরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় মধুমতি নদী থেকে অপরিকল্পিত ভাবে বছরে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ বালু উত্তোলন করে জেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ তিন চাকার ট্রলি যোগে বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী মহল।

মধুমতির বুক থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন শিরোনামে গত ২০২১ সালের ১৫ই মার্চে দৈনিক যুগান্তরে ছবিসহ একটি সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তার পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন জায়গার গত ২৬ অক্টোবর ২০২২ , ১৪ নভেম্বর ২০২২ এবং ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে অবৈধ বালু খাদকদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে দেড় লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয় এবং বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনের মালামাল ভাঙচুর করেন। বিভিন্ন স্পটে এ সকল ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেছেন মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল ও সহকারি কমিমনার (ভ’মি) বাসুদেব কুমার মালো। কিন্তু তার পরও কোন ভাবেই উপজেলার মধুমতি নদী থেকে চর কেটে বালু বিক্রি ও বালু উত্তোলন কোন ভাবেই থামছে না। বালু খাদকেরা মানছে কোনো বাধা। অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে উপজেলা বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকবার মানববন্ধনও হয়েছে।

পাল্লা নদীপাড়ের ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতিদিনই চলছে বালুকাটা। নদীর পাড় থেকে শ্রমিক দিয়ে সরাসরি বালু কেটে শত শত ট্রলি উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে বিক্রি করছে।  এ ভাবে চলতে থাকে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই নদীর বালু কাটছে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন যুবক। ওই এলাকার সাধরণ মানুষকে জিম্মি করে তারা এ ব্যবসা পরিচালনা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। কেউ বাধা দিলে তাকে মারধর, হুমকিসহ নানান রকম বিপদের শিকার হতে হয়। সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহের জন্য গেলে তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

সরেজমিন উপজেলার শিরগ্রাম খেয়াঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অবৈধ ট্রলিতে বালু কাটছে শ্রমিকরা। প্রতিটি গাড়িতে ১০০ বর্গফুট বালু নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করে। গাড়ি প্রতি কমপক্ষে ৬০০ টাকা খাজনা নেই স্থানীয় ওইসব বালু খাদকেরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, মহম্মদপুর উপজেলায় অবৈধ বালু উত্তোলনের যে কয়েকটি স্পট আছে, তাতে বছরে কমপক্ষে পাঁচকোটি টাকার বালু উত্তোলন বিক্রি করা হয়।

নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, মধুমতি নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারনে ফসলি জমি, নদী পাড়ের বসতঘর ও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্থাপনা নদী ভেঙে বিলিন হয়ে যাচ্ছে এবং ভাঙন রোধ করতে ব্যবহৃত কোটি কোটি টাকার ব্লক ও জিও ব্যাগ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন শতশতবার ভারি ইঞ্জিনচালিত যান চলাচলের কারণে রাস্তার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুতগতি গাড়ি চলাচলের কারণে ধুলাবালু নাকে গিয়ে স্কুল কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়েদের নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রামানন্দ পাল বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে এ বছর বেশ কয়েকটি অভিযান দেওয়া হয়েছে। আগামীতেও অভিযান অব্যাহত থাকবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন